প্রায়োগিগ লেখা

ষষ্ঠ শ্রেণি (দাখিল) - বাংলা - বুঝে পড়ি লিখতে শিখি | NCTB BOOK

নিচের লেখাটি জাহানারা ইমামের 'একাত্তরের দিনগুলি' নামের বই থেকে নেওয়া হয়েছে। জাহানারা ইমামের পুত্র রুমী গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং শহিদ হয়েছিলেন। এজন্য জাহানারা ইমাম 'শহিদ জননী' নামে পরিচিত। 

একাত্তরের দিনগুলি

জাহানারা ইমাম

১৯ মার্চ ১৯৭১, শুক্রবার

আজ রুমী অভিনব স্টিকার নিয়ে এসেছে— 'একেকটি বাংলা অক্ষর একেকটি বাঙালির জীবন'। বাংলায় লেখা স্টিকার এই প্রথম দেখলাম। রুমী খুব যত্ন করে স্টিকারটা গাড়ির পেছনের কাছে লাগাল। স্টিকারের পরিকল্পনা ও ডিজাইন করেছেন শিল্পী কামরুল হাসান। উনি অবশ্য নিজেকে শিল্পী না বলে 'পটুয়া' বলেন। কয়েকদিন আগে 'বাংলার পটুয়া সমাজ' বলে একটা সমিতি গঠন করেছেন। গত শুক্রবার এই সমিতির একটা সভাও হয়ে গেল। 

'বাংলার পটুয়া সমাজ'-এর এই সভাতে শাপলা ফুলকে সংগ্রামী বাংলার প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করার এক প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে।

 

২২ মার্চ ১৯৭১, সোমবার

ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও গতকাল একমুহূর্ত বিশ্রাম পায়নি বাড়ির কেউ। সারাদিনে এত মেহমান এসেছিল যে চা- নাশতা দিতে দিতে সুবহান, বারেক, কাশেম সবাই হয়রান হয়ে গিয়েছিল। আমিও হয়েছিলাম, কিন্তু দেশব্যাপী দ্রুত প্রবহমান ঘটনাবলির উত্তেজনায় অন্য সবার সঙ্গে আমিও এত টগবগ করেছি যে টের পাইনি কোথা দিয়ে। সময় কেটে গেছে।

রুমী, জামী আজ সাড়ে আটটাতেই নাশতা খাওয়া শেষ করে কোথায় যেন গেছে।

আগামীকাল ২৩শে মার্চ প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। এর জন্য সারাদেশে প্রচন্ড আলোড়ন ও উত্তেজনা। জনমনে বিপুল সাড়া ও উদ্দীপনা।

 

২৩ মার্চ ১৯৭১, মঙ্গলবার

আজ প্রতিরোধ দিবস।

খুব সকালে বাড়িসুদ্ধ সবাই মিলে ছাদে গিয়ে কালো পতাকার পাশে আরেকটা বাঁশে ওড়ালাম স্বাধীন বাংলাদেশের নতুন পতাকা। বুকের মধ্যে শিরশির করে উঠল। আনন্দ, উত্তেজনা, প্রত্যাশা, ভয়, অজানা আতঙ্ক — সবকিছু মিশে একাকার অনুভূতি।

নাশতা খাওয়ার পর সবাই মিলে গাড়িতে করে বেরোলাম- খুব ঘুরে বেড়ালাম সারা শহরে বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে।

সবখানে সব বাড়িতে কালো পতাকার পাশাপাশি সবুজ-লালে-হলুদে উজ্জ্বল নতুন পতাকা পতপত করে উড়ছে। ফটো তুললাম অনেক।

সবচেয়ে ভালো লেগেছে শহিদ মিনারের সামনে গিয়ে। কামরুল হাসানের আঁকা কয়েকটা দুর্দান্ত পোস্টার দেখলাম। মিনারের সিঁড়ির ধাপের নিচে সার সার সেঁটে রেখেছে। (বইয়ের কিছু অংশ)

 

শব্দের অর্থ

অভিনব= নতুন।

ডিজাইন= নকশা।

আলোড়ন= যা নাড়া দেয়।

পরিকল্পনা= কী করতে হবে তা ঠিক করা।

উদ্দীপনা= যা উদ্দীপ্ত করে।

পোস্টার= লিখে বা ছবি এঁকে কিছু বোঝানো হয় এমন বড়ো কাগজ।

একেকটি বাংলা অক্ষর একেকটি বাঙালির জীবন = বাংলা ভাষার একেকটি অক্ষরের পেছনে লুকিয়ে আছে ভাষা-আন্দোলনে আত্মদানের স্মৃতি।

ঘটনাবলি= বহু ঘটনা।

টগবগ করা= অস্থির হওয়া।

প্রতিরোধ দিবস= ১৯৭১ সালের ২৩শে মার্চে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে পালিত প্রতিবাদ দিবস।

প্রতীক= চিহ্ন।

প্রবাহমান=  যা বয়ে চলেছে।

প্রস্তাব= যা করতে চাওয়া হয়।

শিরশির= উত্তেজনার অনুভূতি।

সমিতি= কয়েকজন নিলে তৈরি করা সংগঠন।

সবুজ-লালে-হলুদে উজ্জ্বল পতাকা= বাংলাদেশের পতাকার প্রথম নকশা ছিল সবুজের ভেতর লাল বৃত্ত, আর বৃত্তের মধ্যে হলুদ রঙে বাংলাদেশের মানচিত্র।

সাড়া= একমত হওয়ার মনোভাব।

সার সার সেঁটে রাখা=  সারি করে আঠা দিয়ে লাগিয়ে রাখা।

স্টিকার= কোথাও লাগানো যায় এমন কাগজের টুকরা।

সভা= মিটিং।

 

পড়ে কী বুঝলাম

ক. এটি কোন বিষয় নিয়ে লেখা হয়েছে? _____________

ঘ. লেখাটি কোন সময়ের ও কয়দিনের ঘটনা? _______________

গ. লেখক কী কী কাজের উল্লেখ করেছেন? _________________

ঘ. লেখার তিন অংশের শুরুতে তারিখ দেওয়া কেন? _____________

ঙ. এই লেখা থেকে নতুন কী কী জানতে পারলে? _______________

 

বলি ও লিখি

'একাত্তরের দিনগুলি' রচনায় লেখক যা বলেছেন, তা নিজের ভাষায় বলো এবং নিজের ভাষায় লেখো।

 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

 

রোজনামচা লিখতে শিখি

প্রতিদিন অনেক ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনা নিজের মতো করে লিখে রাখা যায়। এভাবে লিখে রাখা বিবরণকে রোজনামচা বলে। তুমিও নিয়মিত রোজনামচা লিখতে পারো। রোজনামচা লেখার সময়ে কয়েকটি বিষয়: খেয়াল রেখোঃ 

১. শুরুতে তারিখ এবং জায়গার নাম লিখে রাখতে হয়।

২. বর্ণনা পূর্ণবাক্যে লিখতে হয়।

৩. বাক্যে এমন ক্রিয়া শব্দ ব্যবহার করতে হয়, যা দিয়ে বোঝা যায়, কাজটি হয়ে গেছে। যেমন: সকালে সাঁতার কাটলাম। অথবা, সকালে সাঁতার কেটেছি।

৪. ব্যক্তিগত বিবরণের পাশাপাশি ওই দিনে ঘটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের কথাও লেখা যায়।

মনে রেখো, অনুমতি ছাড়া অন্যের রোজনামচা পাঠ করা ঠিক নয়।

 

রোজনামচা লিখি

এখন তুমি তিন-চার দিনের ঘটনা রোজনামচার আকারে লিখে শিক্ষককে দেখাও।

 

Content added || updated By

আরও দেখুন...

Promotion